Diary

ভয়

গিয়াস আমার বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ক্লাসমেট। ওকে ভালো করে চিনতে আমরা লাল গিয়াস ডাকতাম। ক্লাসে দুজন গিয়াস থাকায় এই বিপত্তি। একজন তার হাউস কালার মিলিয়ে হল লাল গিয়াস অন্যজন নীল গিয়াস। লাল গিয়াসের হাউস তিন তলায়, আমারটা নিচতলায়।

শুক্রবার দিন সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। এই দিন আমাদের জুমুয়ার নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতে হয়। সুতরাং আগে ভাগেই গোসল করার পাঁয়তারা চলতে থাকে, ভীড়ও হয় খুব। যথারীতি আমি গোসল করতে যাচ্ছি, লম্বা করিডোর দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার পথ। বাথরুম থেকে আরেকটু সামনে গেলে দোতলা ও তিনতলায় যাওয়ার সিঁড়ি।

লাল গিয়াস অসামান্য সাহসী একজন মানুষ, সেই নাইনে পড়াকালেই ওর সাহসকে আমরা শ্রদ্ধা ও ভয় করতাম। পরবর্তীকালে সে ভয়ংকর সব কাজ করেছে, এই গল্প পরে করা হবে। ভাবছেন পরেই যদি করি এখন ফেনাচ্ছি কেন? কারন এই গল্প শুনে নায়ককে কেউ যেন ভুল না বোঝেন।

সেই শুক্রবারে আমি গোসল করতে যাচ্ছি, অন্যদিক থেকে লাল গিয়াস আসছে। শুক্রবার এক হাউস থেকে অন্য হাউসে যাতায়াত খুব স্বাভাবিক ঘটনা। বেলা আনুমানিক ১২টা, সুন্দর ঝকঝকে দিন। খোলা বারান্দায় তীব্র রোদের ঝলকানি।

হঠাৎ ও কিছু একটা দেখলো, থামলো, ভাল করে আবার দেখলো। মুখটা বিবর্ণ হল। এরপর এক গগন বিদারি চিৎকার দিয়ে উল্টো দিকে দৌড়। সবাই থমকে এবং চমকে তাকালো, আমি ‘গিয়াস কি হলোরে’ বলে পেছন ধাওয়া করলাম। ও একবার করে পেছন দিকে তাকাচ্ছে, আরও জোড়ে চিৎকার করছে।

আমি ওর পেছনে দৌড়াচ্ছি আর ভাবছি গিয়াস কেন দিনেদুপুরে ভয় পাবে? মাথাটা কি খারাপ হয় গেলো? এই দিকে ও দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের হাউসে আমাদের ব্যাচের জন্য নির্দিষ্ট ব্লকে পৌঁছে গেলো। আমি পেছনে। চিৎকার শুনে ক্লাসমেটরা আগেই বেড়িয়ে এসেছে। আমি বললাম তোরা দেখ গিয়াসের যেন কি হয়েছে। ওরা কিছু একটা বুঝে নিল তারপর প্রাণপন শক্তি দিয়ে আমাকে মাটিতে ফেলে জাপটে ধরল। আমি একবার শুধু বলতে পারলাম আমাকে ধরছিস কেন? গিয়াসের কি হয়েছে দেখ। মাটিতে শুয়ে আমার বিস্ময়ের সীমা নেই। ওরা আমাকেই ধরেছে এবং শান্ত হতে বলছে। আমি শান্ত হচ্ছি, না হয়ে উপায়ও নেই। কিন্তু মন ততই অশান্ত হচ্ছিল। তবেকি ওরা ধরে নিয়েছে আমরা মারামারি করছিলাম? গিয়াস সারাজীবনই আমার বিপক্ষ দলের সুতরাং এটা হতে পারে।

কিন্তু আমি তাড়া দেবো আর লাল গিয়াস দৌড়াবে এটাও হিসাবের খাতায় একেবারে বেমানান। আমার হাঁপানি ততক্ষনে কমেছে। ওরা আমাকে আস্তে আস্তে ছেঁড়ে দিচ্ছে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম, অন্তত মারামারির ব্যাপার না। এবার একটু সাহসের সাথে জানতে চাইলাম তোরা আমাকে ধরলি কেন? এইবার ওরা হাঁসতে শুরু করলো, আমার হাতের দিকে ইশারা, আমার হাতে একটা শাবান আর একটা গা ঘষার জন্য দুন্দুলের খোসা।

………………… ছোটবেলা থেকে অসম সাহসী লাল গিয়াস দুন্দুলের খোসা ভয় পায়।

 

3 thoughts on “ভয়”

  1. what I can expess in bangla is not possible with any other language. I wish I could comment on Bangla but I dont have bangla software. Any way, I was laughting reading this post nicely expressed. Actually gias was my teacher for Mesmerism. I can remember a lots of thing about him after i read this post. Thank you.

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.